| বঙ্গাব্দ
Space For Advertisement
ad728

‘সুস্থতা আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত’

  • আপডেট টাইম: 20-06-2025 ইং
  • 118522 বার পঠিত
‘সুস্থতা আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত’
ছবির ক্যাপশন: লেখক : রিয়াজুল হক

রিয়াজুল হক :  ‘দুইটি নিয়ামতের ব্যাপারে অনেক মানুষ ধোঁকার মধ্যে আছে, স্বাস্থ্য এবং অবসর।’ (সহিহ বুখারি) 

আমাদের জীবনে বহু নিয়ামত আছে, কিন্তু কিছু নিয়ামত এতটাই মৌলিক, এতটাই প্রভাবশালী, যেগুলো ছাড়া জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সুস্থতা। আমরা যখন সুস্থ থাকি, তখন হাজারো কাজ করি, পরিকল্পনা করি, স্বপ্ন দেখি। কিন্তু যখন অসুস্থতা ঘিরে ধরে, তখন সবকিছু থেমে যায়। চোখের সামনে থাকা আনন্দের পৃথিবী ধূসর হয়ে যায়। এটাই প্রমাণ করে, সুস্থতা কেবল শারীরিক সামর্থ্য নয়। এটি জীবনের চালিকাশক্তি, জীবনের আসল আনন্দ।

আল্লাহ আমাদের প্রতিদিন যে সুস্থতা দান করেন, সেটাকে আমরা অনেক সময় গুরুত্ব দিই না। মাথাব্যথা, জ্বর, ঠান্ডা এমন ছোটখাটো অসুস্থতা এলেই বুঝি, এই সাধারণ সুস্থ অবস্থাটিই কত বড় নিয়ামত ছিল। 

প্রচলিত একটি কথা আছে, একজন অসুস্থ মানুষ একটি মাত্র জিনিস চায়, সেটি হলো সুস্থতা। আর একজন সুস্থ মানুষ হাজারটা জিনিস চায়।

আমরা হাঁটছি, কাজ করছি, খেলছি, খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি। এসবের পেছনে আছে সুস্থতা নামের এক অদৃশ্য শক্তি রয়েছে। অথচ আমরা প্রায়ই সেটা উপলব্ধি করি না। কেউ যখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকে, তখন সে বুঝতে পারে, স্বাভাবিকভাবে পানি পান করার সামর্থ্যটাও কত বড় আশীর্বাদ।

ইসলামে সুস্থতাকে এক অমূল্য নিয়ামত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বারবার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতেন, আল্লাহর দেয়া কিছু দানের জবাবদিহি করতে হবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ আমাদের জিজ্ঞাসা করবেন, ‘আমি তোমাকে সুস্থতা দিয়েছিলাম, তুমি সেটা কোথায় ব্যয় করেছো?’

সুস্থতা মানে কেবল রোগমুক্ত শরীর নয়; এটি মন, আত্মা এবং চিন্তাভাবনার সুস্থতাও। অনেক মানুষ বাহ্যিকভাবে সুস্থ, কিন্তু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই প্রকৃত সুস্থতা মানে শরীর, মন, আত্মা তিনটিরই ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয়। আল্লাহর দেওয়া সুস্থতার যথাযথ সম্মান করা, সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা যখন অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হই, নিদ্রাহীন জীবন যাপন করি, মানসিক চাপে ডুবে থাকি কিংবা শরীরচর্চাকে উপেক্ষা করি, তখন আসলে আমরা নিজের ওপরই জুলুম করি। এটা শুধু শারীরিক ক্ষতি নয়, বরং আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি অবহেলা।

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন। তিনি নিয়মিত হাঁটতেন, খাদ্যে পরিমিতি বোধ বজায় রাখতেন এবং মানুষকে বলতেন, ‘মুমিন শক্তিশালী হলে সে দুর্বল মুমিনের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।’ (সহিহ মুসলিম)

প্রশ্ন আসতে পারে, অসুস্থতা কী নিয়ামত নাকি বিপদ? অনেক সময় অসুস্থতা আমাদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে আসে। তখন আমরা থেমে যাই, চিন্তা করি, আত্মসমালোচনা করি। অসুস্থতা অনেক সময় মানুষকে গর্ব থেকে, অবহেলা থেকে ফিরিয়ে আনে। তাই অসুস্থতাকেও একধরনের রহমত বলা যায়, যদি আমরা সেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারি।রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন অসুস্থ হয়, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন, যেমন গাছের পাতা ঝরে পড়ে।’ (সহিহ বুখারি)

আমরা যদি সুস্থ থাকি, তাহলে প্রথমত, আমাদের উচিত সুস্থতার জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলা উচিত, ‘আলহামদুলিল্লাহ, যিনি জীবন দিলেন, সুস্থতা দিলেন।’

দ্বিতীয়ত, আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, মানসিক স্বস্তি, পর্যাপ্ত ঘুম, এসব সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।

তৃতীয়ত, সুস্থতার সময় আমরা যেন আল্লাহর ইবাদত, মানুষের সেবা, সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করি। কারণ, সুস্থতা চিরস্থায়ী নয়। সুযোগ থাকতেই কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ। 

মনে রাখা উচিত, সুস্থতা এমন এক সম্পদ, যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না, ক্ষমতা দিয়ে ধরে রাখা যায়না আর অবহেলা করলে তা হারিয়েও যায়। 

লেখক :  রিয়াজুল হক,

যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।


ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

ad728
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ ইসলামিক টিভি - একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় ক্রিয়েটিভ জোন ২৪